কান্ড থেকে পাতাহীন ড্রাগন গাছ জম্মায়। অল্প জমিতে কোন রাসনিক সার ছাড়াই কিছু জৈব সার ব্যবহার করে বিদেশি এ সুস্বাদূ-পুষ্টিকর ড্রাগন গাছ থেকে ১২ মাসের ১০ মাসই ফল পাওয়া যায়। এটি লাভজনক কৃষি চাষ ভেবেই ২০১৯ সালে আমেরিকার প্রসিদ্ধ ড্রাগন ফল থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনামের চারা সংগ্রহ করে বানিজ্যিকভাবে জলাবাড়িতে ৮ শতাংশ জমিতে ১‘লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম ১‘শ টি পিলারে ৪‘শত ড্রাগন গাছের বাগান করেন অনুয কান্তি। গাছ রোপনের বছর দেড়েক পরে গাছে আশা অতীত ফল আসতে শুরু করলে প্রথম বছরই দেড় লক্ষ টাকার ফল বিক্রয়ও করলেও আরো এক লাখ টাকার গাছের ফল বিক্রয়যোগ্য রয়েছে।
ড্রাগন ফল চাষের ৩ বছরেরই মধ্যে এক বিঘা জমিতে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২‘শটি কংক্রিট পিলারে সাড়ে আট শত ড্রাগন ফলের একটি বাগান করে বছরে কোটি টাকা লাভের স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার এই স্বপ্নের ভাগীদার হতে চান এলাকার অনেকেই। অল্প জমিতে কম পরিশ্রমে এবং কম খরছে অধিক লাভের আশায় অনেকেই বিদেশি ড্রাগন ফ্রুটস ফলের চাষে ঝুকছেন। যে যার মত বাগান তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার জলাবাড়ি, চামী , নান্দুহার, মাহামুদকাঠি সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার উদয়কাঠি, শের-বাংলা, করমজা ও গঙ্গমনি গ্রামগুলোর প্রায় ১১৭টি পরিবার। নেছারাবাদ কৃষি সম্প্রসরণ অফিসার সঞ্জয় হালদার বলেন, “এটি একটি লাভজনক বাণিজ্যিক কৃষিচাষ, ড্রাগন গাছ একবার রোপণ করলে ৩০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে।
ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহীদেরকে কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরমর্শের পাশাপাশি তাদেরকে এ চাষে নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে”।গাছের পরিচর্যা নিয়ে তিনি বলেন, গাছে অধিক পরিমাণে জৈব সার ও অল্প পরিমাণে ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হয়। খরা মৌসুমে সেঁচ দিতে হয়। এছাড়া বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। ড্রাগন গাছে সাধারণত ভাইরাসজনিত রোগ, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাকজনিত রোগ দেখা যায়।গাছে ফল আসলে পিঁপড়া ও মিলিবাগ পোকার আক্রমণ হতে পারে। এজন্য ক্যারাইটি, কপার অক্সিক্লোরাইড ও সাইফারম্যাথিন নামক কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাগানে তিনি বেশি বেশি সময় দিচ্ছেন। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত কৃষকদের সঙ্গে তিনি নিজেও কাজ করছেন।আর একজন ড্রাগন চাষী আশিকুর রহমান বলেন আমি দুটি বাগানে ড্রাগন চাষ করছি ফলন খুবই ভালো, এখানকার চাষীদের জন্য সরকারের সহযোগিতায় উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো বেশি উৎপাদন সম্ভব হতো।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি বাগানে ১.২ হেক্টর জমিতে ১৬‘শ পিলারে প্রায় ১২ হাজার ড্রাগন গাছের চাষ হচ্ছে। এ ড্রাগন চাষে নেছারাবাদে ১১৭টি পরিবারসহ প্রায় ২ হাজার শ্রমজীবী মানুষ জীবীকা নির্বহ করছে। ড্রাগন চাষী অনুয ঘরামী বলেন, ১২ মাসের ১০ মাসই ফল পাওয়া যায় এবং বছরে ৬ বার ফল নিড়ানো হয়। গাছ রোপনের ৭-৮ মাসের মধ্যে গছে ফুল আসে এবং এর ৪৪ দিনের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। এক একটি পিলারের ৪টি ড্রাগন গাছ থেকে বছরে ৩০ থেকে ৪০ কেজি ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। এক‘বিঘার একটি পরিপূর্ন ড্রাগন বাগান থেকে বছরে অন্তত ১০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। অনুয ঘরামী এখন তার ড্রাগন বাগান থেকে আগ্রহী ড্রাগন চাষীদেরকে ড্রাগনের কাটিং বিক্রয় করে বাড়তি অর্থ উপার্যনেরও পথ সুগম করেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষিবিদ চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, ড্রাগন ফল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফল ছিল। পরে ভিয়েতনাম, শ্রীলংঙ্ক, তাইওয়ান, ইংল্যান্ড, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন,মালয়েশিয়া,চীন ও অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক হারে উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের দেশেও এর চাষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। বাংলাদেশ গবেষনা ইনষ্টিটিউটি (বিআরআই)সূত্রে জানা যায়, উদ্ভাবিত এ জাতের চাষ করলে এবং সঠিকভাবে আবাদ ও পরিচর্যা করলে এক একর জমি থেকে বছরে ২৫-৩০ মেট্রিক টন ড্রাগন উৎপাদন করা সম্ভব। ড্রাগন ফল কোনো ফ্রিজিং ছাড়াই এক মাস পর্যন্ত ভাল ভাল থাকে। এখন উপকূলীয় জেলাগুলোসহ নেছারাবাদ উপজেলায় ক্রমশ ড্রাগন ফলের চাষ ছড়িয়ে পরছে। এখানকার মাটি ও জলবাযুর সঙ্গে ড্রাগন চাষের সম্পর্ক বিদ্যমান। ড্রাগন গাছ রোপনের পরবর্তী বছর থেকে এর তেমন কোন খরচ নেই, সামান্য পরিচর্যা করলেই হয় বলে জানায় তিনি। উদ্যেক্তারা বলেন ড্রাগন চাষিদের মধ্যে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে উপজেলায় ড্রাগন চাষ দ্রূত বাড়বে এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থাও হবে এমনটাই প্রত্যাশা নেছারাবাদ ড্রাগন চাষীদের।