কর্মহীন হয়ে পড়েছে মশারি তৈরি কারিগররা। লকডাউন চলাকালীন সময় ঢাকা থেকে কাঁচামাল আনতে না পারে এবং তৈরি মশারি বিক্রি করতে না পেরে নিজেদের স্বল্প পুঁজির অর্থ শেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এই মশারি তৈরির কাজে নিয়োজিত 20 হাজার নারী পুরুষ ,অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাজীবন, তাদের খোঁজ কেউ রাখেনি পায়নি তেমন কোনো সরকারি সাহায্য, চরম দারিদ্র্যতাই নিজেদের আদি পেশা পেছেড়ে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন দক্ষ মশারি তৈরির কারিগর ও কারখানা মালিকরা এতে ঐতিহ্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নেছারাবাদের মশারি শিল্প।
নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠী, কৌরিখাড়া,নান্দুহার, ইন্দেরহাট, মিয়ার হাট, সোহাগদল,বিন্না, জিলবাড়ি, চামি, ডুবি, উড়িবুনিয়া, পঞ্চবেকী ও বলদিয়াসহ স্বরূপকাঠি এর আশেপাশে উপজেলা ৩৭টি গ্রামে প্রায় 200 টি মশারি তৈরি ছোট বড় কারখানা রয়েছে,অগণিত পরিবার নিজেরা মশারি তৈরি করছে নিজেদের বসত ঘরে। ঘরোয়া পরিবেশে অলি-গলিতে গড়ে ওঠেছে এ সব কারখানা। প্রতিদিন এসব গ্রাম থেকে হাজার-হাজার পিস মশারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হত ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। নেছারাবাদের মশারি তৈরি জনক হচ্ছেন মশারি পট্টির এই সন্তান আব্দুল আউয়াল ও হাবিবুর রহমান । আজ থেকে ৩৫_৩৬ বছর আগের কথা , তখন তারা দুজন ছিলেন টগবগে তরুণ মনে ছিল নতুন কিছু করার চেতনা, তাদের বাপ ভাইয়েরা ছিল দর্জি পেশায়, সে হিসেবে তাদের বাড়িতে এবং বাজারের দোকানে ছিল সেলাই মেশিন, তখন বাইরে থেকে পুরনো কাপড় আসতো আর এই কাপড় দিয়ে দর্জিরা প্রয়োজনীয় পোশাকসহ কাপড়ের নানান জিনিস তৈরি করত। একবার পুরানো কাপড়ের সাথে চলে আসলো কিছু নেট জাতীয় কাপড়, সেই কাপড় দেখে আব্দুল আউয়ালের মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল নেট টুকরো দিয়ে মশারি তৈরি করা যায় কিনা? সে জানালো হাবিবুর রহমানকে এর পরে দুজনে মিলে নেটের টুকরো কে জোড়া লাগিয়ে তৈরি করে ফেলল মশারি। আর সেদিনই নেছারাবাদে উদিত হল আরেকটি নতুন শিল্পের এই দুজনের হাত ধরে। সেই মশারি তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করে এবং অনেক লাভবান হলেন। তখনই খুঁজতে শুরু করে মশারি তৈরির কাপড় কোথায় পাওয়া যায়, বাংলাদেশে তখন মশারি তৈরি কাপড়ের কারখানা ছিল না কিন্তু তারা ও হাল ছাড়লেন না অনেকদিন পর শুনতে পেলেন ঢাকা একটি কারখানা হয়েছে যারা মশারি তৈরির কাপড় তৈরি করে। ছুটে গেলেন সেখানে ওখান থেকে কিছু কাপড় নিয়ে এসে শুরু করলেন মশারি তৈরি কাজ ।
শুরুতেই একাজের লভ্যাংশ বেশি থাকতো সেটা দেখে আশেপাশে বেকার যুবকরা তাদের কাছে এসে মশারিত তৈরীর কাজ শিখতে থাকে এবং স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ায় ওই মহল্লার প্রায় সব পরিবারে ধীরে ধীরে যুকে মশারি তৈরির ব্যবসায়। সময়ের বিবর্তনে ছড়িয়ে পড়ে পরে উপজেলাজুড়ে এবং আশেপাশের উপজেলায় ও। বাংলাদেশের অন্য কোথাও এক এলাকার সবাই মশারি তৈরি করে তা হয়তো জানা নেই কারো। এখানকার মশারি তৈরি কারিগররা প্রথমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মশারির জন্য প্রকারভেদ নেট, কাপড় মশারি তৈরির যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজন মতো সাইজ অনুসারে কেটে মশারি তৈরি করে। পরে সেই মশারি ঢাকাসহ পিরোজপুর ও বরিশাল-খুলনাসহ সারা দেশে পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য পাঠায়। অনেকে পরিবারের নারী পুরুষ সদস্যরা ফেরি করে এলাকায় এলাকায় গিয়ে বিক্রি করে, কেউ কেউ শোরুম করেও বিক্রি করছেন এসব মশারি। উৎপাদনকারী স্থানীয় মশারি কারিগররা জানান, প্রকারভেদে বিভিন্ন মশারি বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। নীচে ১২০ টাকা থেকে শুরু করে উপরে ১০০০ টাকার বেশিতে বিক্রয় হয় । এখানকার একজন কারিগর এইসব কারখানা থেকে ৮ হাজর থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করে থাকে। নেছারাবাদের মশারি শিল্প এবং অত্র শিল্পের কারিগরদেরকে স্বীয় পেশায় টিকিয়ে রাখতে হলে এ খাতে পর্যাপ্ত ঋন সুবিধাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, কাচাঁ মালের মূল্য কমানোসহ যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও এই শিল্পের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা করে পেশার মান উন্নত করলে মশারি শিল্পকে পুনরায় সগৌরবে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন এই শিল্পের সাথে সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ও কারিগররা।